এগিয়ে আসুন, বঞ্ছিত মানুষের পাশে দাঁড়ান
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সংকটকালে, যখন বিশ্বব্যাপী লকডাউন চলছিল, তখন শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছায়। সেই কঠিন সময়ে, মানবিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়ে গঠন করে মৈত্রী ভলেন্টিয়ার্স।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সংকটকালে, যখন বিশ্বব্যাপী লকডাউন চলছিল, তখন শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছায়। সেই কঠিন সময়ে, মানবিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়ে গঠন করে মৈত্রী ভলেন্টিয়ার্স।
✔️ হ্যাঁ। রক্তদান পুরোপুরি নিরাপদ, যদি তা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা করা হয়। নতুন ও জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়, তাই কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না।
❌ না। একজন সুস্থ ব্যক্তি রক্ত দেওয়ার পর সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শরীর সেই পরিমাণ রক্তের প্লাজমা পুনরায় তৈরি করে ফেলে। ১-২ সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ রক্ত পুনরুদ্ধার হয়।
✔️ প্রতি ৪ মাসে একবার (পুরুষ) এবং প্রতি ৬ মাসে একবার (নারী) রক্ত দেওয়া নিরাপদ। তবে কোনো দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা থাকলে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
রক্তদানে উপযুক্ত ব্যক্তির যোগ্যতা:
বয়স: ১৮–৬০ বছর
ওজন: ৪৫ কেজির বেশি
কোন জটিল রোগ নেই (যেমন হেপাটাইটিস, এইডস, টিউবারকুলোসিস)
গত ১ বছরে কোনো বড় সার্জারি বা রক্তসংক্রমণ হয়নি
✔️ অবশ্যই। সুস্থ এবং যোগ্য নারীরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ত দিতে পারেন। তবে মাসিক চলাকালীন বা গর্ভাবস্থায় রক্তদানের পরামর্শ দেওয়া হয় না।
❌ না। খালি পেটে রক্ত দেওয়া ঠিক না। রক্তদানের অন্তত ১-২ ঘণ্টা আগে হালকা খাবার খাওয়া উচিত।
পরিচয়পত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র/ছাত্র আইডি)
পূর্ববর্তী রক্তদানের তথ্য (যদি থাকে)
হালকা খাবার খেয়ে আসা
পানি পান করে আসা
অন্তত ১০–১৫ মিনিট বিশ্রাম নিন
প্রচুর পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করুন
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারী কাজ বা ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন
❌ না। স্বেচ্ছায় রক্তদানের উদ্দেশ্য হলো মানবিক সহায়তা। এটি কোনো বাণিজ্যিক কাজ নয়।
রক্তগ্রহীতা ও রক্তদাতার রক্তের গ্রুপ মিল থাকা জরুরি। নিচে সাধারণ রক্তদানের মিল তালিকা:
আপনার রক্ত গ্রুপ | দিতে পারবেন | নিতে পারবেন |
---|---|---|
O- | সকলকে | কেবল O- |
O+ | O+, A+, B+, AB+ | O+, O- |
A- | A-, A+, AB-, AB+ | A-, O- |
A+ | A+, AB+ | A+, A-, O+, O- |
B- | B-, B+, AB-, AB+ | B-, O- |
B+ | B+, AB+ | B+, B-, O+, O- |
AB- | AB-, AB+ | AB-, A-, B-, O- |
AB+ | AB+ | সকল গ্রুপ |
প্রতিদিন আমরা অসংখ্য রোগীর মৃত্যুর খবর শুনি। দুর্ঘটনা, প্রসবকালীন জটিলতা, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া বা অস্ত্রোপচারের সময়—প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটি বিষয় সাধারণভাবে উঠে আসে: রক্তের অভাব। বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী শুধু সময়মতো রক্ত না পাওয়ার কারণে প্রাণ হারান। অথচ একটু সচেতনতা, একটু মানবিকতা, এবং কয়েক মিনিট সময় দিলেই এই মৃত্যু সহজেই ঠেকানো সম্ভব।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। অথচ সংগৃহীত হয় গড়ে ৬ থেকে ৭ লাখ ব্যাগ, যার ফলে প্রতিবছর ২ থেকে ৩ লাখ ব্যাগ রক্ত ঘাটতি থাকে।
এই ঘাটতির ফলেই রক্তের জন্য হাসপাতালে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা বন্ধুদের মাঝে হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে। প্রায়শই দেখা যায়, জরুরি রোগী হসপিটালে ভর্তি থাকলেও রক্ত না পাওয়ায় চিকিৎসা স্থগিত থাকে বা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।
সরকারি বা বেসরকারি সূত্রে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর অনুমান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০,০০০+ রোগী রক্তের অভাবে মারা যান। তাদের মধ্যে অধিকাংশই:
প্রসবকালীন রক্তক্ষরণে আক্রান্ত মা,
সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি,
থ্যালাসেমিয়া ও ক্যানসার রোগী,
এবং অস্ত্রোপচারের রোগী।
রক্ত সংকটের মূল কারণগুলো হল:
রক্তদানের বিষয়ে সচেতনতার অভাব
ভুল ধারণা ও ভয় (যেমন: রক্ত দিলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়)
স্বেচ্ছায় রক্তদাতার অভাব
আত্মীয়-নির্ভরতা: অনেকেই মনে করেন শুধু আত্মীয়র জন্যই রক্ত দেওয়া উচিত
পর্যাপ্ত রক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই অনেক হাসপাতালেই
অনেকেই এখনো মনে করেন রক্তদান করলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়—এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং:
রক্তদানের মাধ্যমে শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয়
হার্ট ও লিভারের কার্যকারিতা ভালো থাকে
নিয়মিত রক্তদাতা হলে শরীরে লোহার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে
রক্তদাতা নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করিয়ে নিতে পারেন (রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদি)
একজন সুস্থ মানুষ প্রতি ৩-৪ মাসে একবার রক্ত দিতে পারেন—কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
নিজে রক্তদাতা হোন
প্রতি ৪ মাসে একবার রক্ত দিন
বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের উৎসাহিত করুন
সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা ছড়ান
মৈত্রী ভলান্টিয়ার্স রক্তদাতা নেটওয়ার্কে যুক্ত হোন
আপনি যদি ১৮–৬০ বছর বয়সী সুস্থ একজন মানুষ হন, তাহলে এখনই রক্তদানের সিদ্ধান্ত নিন। আর যদি নিজের শহরে কোনো রক্তদাতা সংগঠন খুঁজে না পান, তাহলে মৈত্রী ভলান্টিয়ার্স এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন — আমরা আপনাকে গাইড করব।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
সন্ধানী জাতীয় রক্তদান সংস্থা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (DGHS)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)
📍 খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে প্রাচীন মিশরে
🗣️ রক্তকে জীবনীশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে রক্তের ব্যবহার ছিল, তবে সরাসরি রক্তদানের কোনো প্রমাণ নেই।
📍 ১৬৬৫ সালে, ইংল্যান্ডে
👨⚕️ ড. রিচার্ড লোয়ার এক কুকুর থেকে আরেক কুকুরে সফল রক্ত সংক্রমণ করেন।
📌 এটি ইতিহাসের প্রথম প্রাকৃতিক ট্রান্সফিউশন।
📍 ১৮১৮ সালে, যুক্তরাজ্যে
👨⚕️ ড. জেমস ব্লান্ডেল একজন প্রসূতির প্রাণ বাঁচাতে প্রথমবার সফলভাবে রক্ত সংক্রমণ করেন।
📍 ১৯০১ সালে
🧪 কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার A, B, AB, এবং O রক্তের গ্রুপ আবিষ্কার করেন।
🩸 এই আবিষ্কার রক্তদানে বিপ্লব সৃষ্টি করে।
📍 প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪–১৮)
⚕️ সৈন্যদের প্রাণ রক্ষায় রক্ত সংরক্ষণের প্রাথমিক পদ্ধতি চালু হয়।
📍 ১৯৩৭ সালে, শিকাগো
🏦 বিশ্বের প্রথম আধুনিক রক্ত ব্যাংক স্থাপন করা হয়।
📍 প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪–১৮)
⚕️ সৈন্যদের প্রাণ রক্ষায় রক্ত সংরক্ষণের প্রাথমিক পদ্ধতি চালু হয়।
📍 ১৯৪০-এর দশকে
🧬 এটি রক্তদানের নিরাপত্তা আরও উন্নত করে।
💁♂️ একই সময় স্বেচ্ছাসেবী রক্তদানের ধারণাও জনপ্রিয় হয়।
Rh ফ্যাক্টর (বা Rhesus factor) হলো রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকার (Red Blood Cells) ওপর থাকে। যদি কারো রক্তে এই প্রোটিন থাকে, তবে তাকে Rh পজিটিভ (Rh⁺) বলা হয়, আর যদি না থাকে, তবে তাকে Rh নেগেটিভ (Rh⁻) বলা হয়।
যদি আপনার রক্তের গ্রুপ হয় A+, তাহলে আপনি A গ্রুপের এবং Rh পজিটিভ।
যদি হয় B-, তাহলে আপনি B গ্রুপের এবং Rh নেগেটিভ।
রক্তদানে: রক্তদানের সময় Rh মিল না হলে রক্ত জমে যেতে পারে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
গর্ভাবস্থায়: যদি মা Rh নেগেটিভ হন এবং গর্ভস্থ সন্তান Rh পজিটিভ হয়, তাহলে পরবর্তীতে জটিলতা তৈরি হতে পারে (Rh incompatibility)।
➤ একে প্রতিরোধ করতে ডাক্তাররা Anti-D ইঞ্জেকশন দেন।
১৯৪০ সালে Rh ফ্যাক্টর প্রথম আবিষ্কৃত হয় রিসাস বানর (Rhesus monkey) নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে, তাই এর নামকরণ হয় “Rh” ফ্যাক্টর।
📍 প্রতি বছর ১৪ জুন
🎉 কার্ল ল্যান্ডস্টাইনারের জন্মদিন উপলক্ষে
🌍 বিশ্বজুড়ে রক্তদাতাদের সম্মান জানানো হয়।
📌 বাংলাদেশে রক্তদানের ইতিহাস শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরবর্তীতে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসায় রক্তের প্রয়োজন মেটাতে। ১৯৭৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে “সন্ধানী” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রক্তদানের সাংগঠনিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি হাসপাতাল এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন রক্তদানের আয়োজন করতে থাকে। ২০০০-এর দশকে মোবাইল ও ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিকাশের ফলে রক্তদাতাদের খোঁজা সহজ হয় এবং Facebook ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ব্লাড ডোনেশন গ্রুপ গড়ে ওঠে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮–১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়, যার একটি বড় অংশই আসে স্বেচ্ছাসেবী দাতাদের কাছ থেকে। রক্তদানের এই ঐতিহাসিক পথচলা আজ একটি মানবিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
WHO
Britannica
Bangladesh Red Crescent Society
সন্ধানী জাতীয় দাতব্য সংগঠন
Medical History Archives
moitryvolunteers.org © 2025. All rights reserved.